রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের পিছনে নেপথ্য কারিগর যারা




স্পেনিশ ফুটবল নিয়ে কথা হলে দুইটা নামই সবার আগে উঠে আসবে। রিয়েল মাদ্রিদ এবং এফ সি বার্সেলোনা। এফ সি বার্সেলোনার নামের সাথে একটা বিশেষণ যোগ হয় প্রায়ই যাকে বার্সার সমর্থকরা বলে বার্সা ডিএনএ। কখনো কি মনে হয়েছে তাহলে রিয়েল মাদ্রিদের ডিএনএ কি? ফুটবল হ্যারিটেজ তো দুইদলেরই আছে। তাহলে রিয়েল মাদ্রিদের ডিএনএ থাকবে না এটা অবাক করে না? আপনি হয়তো জানেন না বাট রিয়েল মাদ্রিদেরও একটা ডিএনএ আছে। আর এটাকে আপনি সাম্রাজ্যবাদী আলেকজেন্ডারের সাথে তুলনা করতে পারেন। এটা হচ্ছে শুধুই জিততে চাওয়া। এই যেমন আমরা এখনো আমাদের ৩৪ নম্বর লা লিগা ট্রফি নিয়ে আনন্দে ভেসে যাচ্ছি কিন্তু আপনি যদি একচুয়াল রিয়েল মাদ্রিদ ডিএনএ ক্যারি করে থাকেন তাহলে আপনি জানেন ৩৪ নম্বর লা লিগা এখন শুধুই অতীত। এটা তিন দিন আগেও আমাদের চরম কাঙ্ক্ষিত কিছু একটা ছিল। কিন্তু দুই দিন যেতে না যেতেই এটা অতীত। এটা এখন আমাদের ট্রফি ক্যাবিনেটে বাড়তি আরেকটা শোভা মাত্র। আমাদের ঈগলের চোখ এখন চ্যাম্পিয়নস লীগ ট্রফির দিকে। যে জিদানকে নিয়ে এত স্তুতিবাক্য হচ্ছে আগামী মাসে সিটির সাথে ম্যাচ হারলেই দেখবেন কত সমালোচনা ধেয়ে আসে তার দিকে। কেউই মনে রাখবে না কয়দিন আগেই সে মাত্র লীগ জিতেছিলো। এটাই মাদ্রিদের চরিত্র। আর একারনেই লীগ জেতার পর এই প্যান্ডামিকের পর প্রথমবারের মত আমাদের প্রেসিডেন্ট প্রেসের সাথে কথা বলেছে। আর প্রথম কথাটাই কি ছিল? "আমাদের চোখ এখন ম্যানচেস্টার সিটির ম্যাচের দিকে। এটা এমন না যে আমি আত্মতুষ্টিতে ভুগছি সেই ম্যাচটা জিতবো। এটা আমার প্লেয়ার এবং কোচরাই কনভিন্স করেছে আমরা জিততে পারি"। এই কথাগুলো বলার পরেই দলকে কনগ্রেটস করেছে, রামোসের ফিউচার নিয়ে কথা বলেছে। বাট সবার আগের কথাই ছিল পরের চাহিদা নিয়ে। 

এই যে রিয়েলের এই ডিমান্ডিং নেচার সেটা কতটা প্রেশারের সেটা হয়তো আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট রামন কালদেরনের কথা থেকে কিছুটা বুঝা যায়

"আমার সময়ে যখনই আমরা কোন ট্রফি জিতেছি আমি কখনোই খুশি বা রিলাক্স হতে পারি নি আমরা। এটা আমাদের জন্য একটা রিলিফের মত। আমার মনে এটাই চলতো আগামী কয়েকদিন আমার জীবন একটু কম ঝামেলাপূর্ণ হবে, কম সমালোচনা হবে। আমি প্রপার খেলোয়ার সাইন করতে পারি নি প্রপার কোচ আনতে পারি নি এটা নিয়েও কথা কম হবে। এটা শুধু পরবর্তী ম্যাচের আগ পর্যন্তই। পরের ম্যাচেই যদি কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট না আসে আবারো এই কথাগুলো ফিরে আসবে। রিয়েল মাদ্রিদের চেয়ে চাপের দায়িত্ব আর কিছুই হতে পারে না। আমি আমার এই জীবনে ১০ জন প্রধানমন্ত্রী আর দুইজন পোপের সাথে দেখা করেছি। তাদের প্রত্যেকের চাহিদাই ছিল রিয়েল মাদ্রিদের জার্সি। যার পিছনে এন নাম্বার সহ তাদের নাম লেখা থাকতে হবে এবং আমাকে পোজ দিয়ে ছবি তুলতে হবে। মাঝে মাঝে এটা লজ্জাকর পরিস্থিতি তৈরি করলেও এটা আমাদের ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা দেয়। 

আমি ব্যাকহামকে নিয়ে সেই গল্পটা সবাইকে বলে বেড়াই। ২০০৩ সালে আমরা ব্যাকহামকে সাইন করাই। এটা নরমাল দিন ছিল। আমরা তার প্রেস রেখেছিলাম সকাল এগারোটা বাজে। এই সময়টা নির্ধারন করা হয়েছিলো এশিয়া মহাদেশকে মাথায় রেখে। কারন সে সেখানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অনুষ্ঠান খুব নরমাল ছিল। প্রেসিডেন্ট তার নরমাল কথাই বললো "তোমার জন্মই হয়েছে এই ক্লাবে খেলার জন্য" ব্যাকহামও তার রুটিন কথাই বললো "এটা আমার জীবনের সেরা দিন। ইটস এ ড্রিম কাম ট্রু"। অথচ এই অনুষ্ঠানটা কিনা টিভিতে দেখা দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় সামাজিক ইভেন্ট। প্রথমটা হলো প্রিন্সেস ডায়নার ফিউনারেল। এমনকি ব্যাকহাম যে নিজেও এসেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মত এক বড় ক্লাব থেকে সেও আমাকে বলেছিলো এখানের জীবন আমার অনেক বেশি বেতিক্রম হতে যাচ্ছে।"

এটাই রিয়েল মাদ্রিদ লাইফ এটার ডিমান্ডিং নেচার আনেক শক্ত সামর্থ মানুষকেও অতি সহজে ভেঙ্গে দিতে পারে। আর একারনেই কালদেরন তার সময়ের কিছু কোচ নিয়ে কথায় বলেছিলো এখানের কিছু কোচ ছিল যারা রিয়েল মাদ্রিদে যোগ দেয়ার মত যোগ্য ছিল না আর বাকিরা রিয়েল মাদ্রিদের প্রেশার নিতে পারে নি। 

মাদ্রিদের এই ডিমান্ডিং নেচার নিয়ে কথাতেই আসে ১৯৮৯ সালে জন টোশাকের পর রিয়েল মাদ্রিদ ৩০ বছরে মোট ২৬ জন কোচ বদল করেছে। একমাত্র ভিসেন্তে দেল বস্ক এবং হোসে মোরিনহো টানা তিন সিজন কোচিং করাতে পেরেছিলো। কিছু আছে সিজন পার করতে পারে নি। যেমন কামাচো সেপ্টেম্বরেই স্যাক হয়েছে। যার রিসেন্ট উদাহরন বেনিতেজ বা লোপেতেগুই। যারা হাফ সিজনেই স্যাক হয়েছিলো। রিয়েল মাদ্রিদে জেতাটা হচ্ছে বাধ্যতামূলক। এখানে ক্লাসের সেকেন্ড বয় হওয়া কোন এচিভমেন্টই না। এখানের প্রথম এবং একমাত্র কথা জিততেই হবে। 

রিয়েল মাদ্রিদ যেখানে কোচদের রকিং চেয়ার খেলা চলে সেখানে কোচদের জীবন কেমন হয় চলুন দেখি

কোচদের জীবন জানার আগে আপনাকে জানতে হবে কাদের কোচিং করাতে আসছে কোচরা। মাইকেল ওয়েন তার রিয়েল মাদ্রিদ স্মৃতি নিয়ে বলেছিলো

"রিয়েল মাদ্রিদ ইংলিশ ক্লাবগুলোর মত নয়। এখানে ইংল্যান্ডের মত যতটা না খেলোয়াড়রা কোচের হাতে তারচেয়েও বেশি কোচ খেলোয়াড়দের হাতে। যদি কখনো ট্রেনিং এ আপনি দেখেন রবার্তো কার্লোস স্ট্রাইকার খেলতে চাচ্ছে বা রোনালদো রাইট ব্যাক হতে চাচ্ছে তখন আপনাকে বুঝে নিতে হবে গত রাতে  তাদের ড্রিংকসের পরিমান একটু বেশিই ছিল"

নাম উল্লেখ না করে একজন সাবেক সহকারী কোচ বলেছিলো

"রিয়েল মাদ্রিদ আমাদের যে ধরনের স্কোয়াড দেয় সেই স্কোয়াড কোন রকম কোচ ছাড়াই ৮০% ম্যাচ জিতে যেতে পারে। তাদের সেই ট্যালেন্ট আছেই। কিন্তু কোচ হিসেবে আপনার লাইফ নির্ভর করে বাকি ২০% ম্যাচ"

কার্লো এনচেলেত্তির সহকারি কোচ ক্লেমনেট বলেছিল

"আমরা ছোট ছোট গ্রুপ বানিয়ে কোচিং করাতাম। এক পাশে সব এটাকার আর অন্যদিকে সব ডিফেন্সার। আমরা সিজন শুরু হবার আগে ট্রেনিং এ দেখছিলাম চারদিক দিয়ে যেন গোলের বন্য হচ্ছে। ডিফেন্ডার এবং গোলকিপার যেন অসহায়। আমি চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম কোচকেও বললাম সেই কথা। কিন্তু আনচেলেত্তি আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললো সব ঠিকই আছে। ম্যাক্সিমাম টিম এদের গোলই দিতে পারবে না। এবং লীগ শুরু হলে দেখলাম প্রায় প্রতি ম্যাচেই দেখলাম আমরা ৪-০, ৫-০ করে জিতছি। আমি তখনই নিজেকে বলেছিলাম এই টিম সত্যিকারের টিম না। এখানে ট্যালেন্ট ওভারলোড করে"

এই কথার প্রেক্ষিতেই কেমন কোচ লাগে রিয়েলের সেই আলাপে আবারো চলে যাই রামন কালদেরনের কথায়

"রিয়েল মাদ্রিদের আসলে কোন ট্যাক্টিকাল কোচের প্রয়োজন নেই। আমাদের প্রয়োজন একজন মনোবিদের। কারন এমনকি ট্রেইনিং ম্যাচ হারলেও প্লেয়ারদের মন খারাপ হয়ে থাকে, তারা বাড়ি ফিরে যায় মনে রাগ পুষে রেখে। আর যদি কোন ম্যাচ হেরে বসে ট্রেনিং এ অন্য টিম দেখা যায়। প্রতিটা প্লেয়ার বিষন্ন হয়ে থাকে। এই মনোভাব কাটাতেই আমাদের মনোবিদ টাইপের কোচের প্রয়োজন হয়। যে এই সকল মুহূর্তে টিমকে তুলে ধরবে। টিমের ঐ কোয়ালিটি থাকেই যেখানে বলে দিতে হয় না কার কি কাজ বা কাকে কিভাবে খেলতে হবে"।

এবার কোচদের প্রাথমিক এক্সপ্রেশন নিয়ে বলি আবারো ফিরে যাই আনচেত্তির সহকারীর কথায়

"কার্লোর সাথে আমার পরিচয় চেলসি থেকে। সেখান থেকে আমর। গেলাম প্যারিস সেইন্ট জার্মেই তে। দুই জায়গাতেই আমরা ডমেস্টিক কাপে ডমিনেট করেছি। তারপরই আসে ২০১৩ সাল। যেখন আমরা দুজন আমাদের জীবিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা নেই। রিয়েল মাদ্রিদে আসার পর ভালদাবেস দর্শন করে আমার ধারনা যেটা ছিল এটা অনেক বড় ক্লাব। চেলসি বা পিএসজি এর কাছে কিছুই না। খেলোয়াড়রাও এখানের অনেক বিশাল বলাটা হয়তো বাকিদের প্রতি অপমানসূচক হবে । কিন্তু এখানকার স্কোয়াড ডেপথ ওয়ে মোর বিগার দ্যান চেলসি এন্ড পিএসজি। এটা একটা আক্ষরিক অর্থেই সত্যিকারের ফুটবল প্রতিষ্ঠান। ভালদাবেস থেকেই আমরা চলে যাই রিয়েল মাদ্রিদের বোর্ড রুমে। বোর্ড রুমে আপনি যেখানেই বসুন আপনার চোখের সামনে তাদের নয়টা চ্যাম্পিয়নসলীগ ট্রফি চোখে পরবে। তাদের বাকি কোন কাপই নজরে আসে না সেখান থেকে। এই রুমে বসেই আপনি বুঝে যাবেন আপনার প্রথম এবং আপমোস্ট প্রায়োরিটি কি। ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব"

এই জয়ের হিউমাঙ্গাস প্রেসার নিয়েই হোসে মোরিনহোর এসিস্ট্যান্ট এবং রিয়েল মাদ্রিদের সাবেক প্লেয়ার আতুয়ার কারাঙ্কা বলেছে 

"আমি ইয়ুপ হেইঙ্কসের দলে ছিলাম খেলোয়ার হয়ে ছিলাম। সে চ্যাম্পিয়নসলীগ জিতলো এবং স্যাক হয়ে গেল। তারপর ডেল বস্ক দুইটা চ্যাম্পিয়নসলীগ জিতলো এবং সেও স্যাক হলো। এটাই রিয়েল মাদ্রিদের চরিত্র। এখানে আপনাকে সবসময়ই আপনার সেরাটা দিতে হবে। আপনার সিচুয়েশান এখানে যে কোন সময় বদলে যেতে পারে। পিছনে কি করেছেন তার কিছুই মানে রাখবে না বর্তমানে আপনার সেরাটা না দিলে।"

আমাদের আরেক সাবেক কোচ কারাঙ্কা বলেছে

"আমি ১৯৯৭ সালে এই ক্লাবে এসেছিলাম বিলবাও থেকে। এসেই ড্রেসিং রুমে পেলাম এক ঝাক বিশ্বমানের তারকা। দুই মাসের মধ্যেই আমরা স্পেনিশ সুপার কাপ জিতলাম। আমি অনেক খুশি ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ড্রেসিংরুমে অনেক বড় উৎযাপন হবে। এটা আমার জেতা প্রথম কোন কাপ ছিল। আমি আগে কিছুই জিতি নি। কিন্তু আমি ড্রেসিং রুমে এসে দেখি সবাই শাওয়ারে চলে গেছে।মাদ্রিদে সুপার কাপ ইজ নাইস বাট দেয়ার আর বিগার ফিশ টু ফ্রাই। আমি সেদিনই বুঝেছিলা। এই ক্লাবের সাথে অন্য ক্লাবের তুলনা চলে না।" 

আমাদের ক্লাবে কোচ প্রচুর চ্যাঞ্জ হয় এই চরিত্রের কারনে আমাদের এটা নিয়ে রামন কালদেরন একবার বলেছিলো

"ফেবি কাপ্যোলা আমাকে একবার বললো সে আসলে এত দায়ীত্বের ভার নিতে পারছে না। তারপক্ষে এত প্রেশার হ্যান্ডেল করা সম্ভব না। আবার সুস্টার একবার বার্সেলোনার ম্যাচের কয়েকদিন আগে বলেছিলো তারা বার্সেলোনাকে হারাতে পারবে না। রিয়েল মাদ্রিদের কোচ কখনোই এ ধরনের কথা বলতে পারে না। কারন তাদের থেকে বড় টিম হয় না। সো তাই কোচদেরই স্যাক হতে হয়। ২৪ জন খেলোয়াড়কে স্যাক করা সম্ভব না।"

টোশাকের ছেলে তার স্মৃতিতে বলেছে

"আমার বাবা আমার হিরো। উনি অনেক কঠিন মনের মানুষ। সেই উনাকেও রিয়েল মাদ্রিদের আগে এবং রিয়েল মাদ্রিদের সময়ে মিলানো যায় না। আমার মনে আছে একবার আমরা ছুটির দিনে গলফ খেলতে গিয়েছিলাম। গলফ মাঠের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে আমরা খেলাম। সেখানে বা গলফ কোর্সে কোন মানুষই ছিল না। তারপরদিন ডাইনিং রুমে বাবা আমাকে অভিনন্দন জানালেন। কেন অভিনন্দন জানতে পত্রিকার প্রথম পাতায় দেখি আমাদের সব ছবি।  বাবা হাসতে হাসতে বলেছিলো কনগ্রেটস আবারো তুমি পত্রিকার প্রথম পাতায় এসেছো"

কার্লো এনচেলেত্তি তার বইয়ে লিখেছে

"যদিও পেরজ সবসময় আমাকে নিয়ে অনেক ভাল ভাল কথা বলেছে তবুও আমি সারাক্ষণ আমার চোখ খোলা রাখতাম। আমি জানতাম মাদ্রিদ এমন ক্লাব না যেখানে তুমি তোমার শিকড় ছড়িয়ে দিতে পার। এখানে সিচুয়েশান চোখের পলকে বদলে যায়। ফুটবলের ক্রেজি স্ট্যান্ডার্ডের মাঝেও মাদ্রিদ তার ক্লাসে একমাত্র" 

তবুও এত কোচ চ্যাঞ্জ করা শুধুমাত্র সফলতা না আনতে পেরে অবাকই করে। এটা নিয়ে আরেক সাবেক সহকারী কোচ বলেছিলো

"কার্লো প্লেয়ারদের স্বাধীনতা দেয়ায় বিশ্বাসী ছিল। সে তার খেলোয়াড়দের এমন কিছুই করতে দিতো না যা তাদের পছন্দের না। আর তাই চ্যাম্পিয়নসলীগ জেতার পরের বছর লীগ জিততে না পারায় তাকে স্যাক করা হলে প্লেয়াররাও তার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলো। তারপর তারা বেনিতেজকে আনলো যে ছিলো কিছুটা স্ট্রিক্ট। সে বেশি নজর দিয়েছিলো স্ট্রিক্ট ডায়েট আর ট্রেনিং এ। অপরদিকে আরেকজন কোচ এসেছিলো যে কিনা চেয়েছিল টিমের সাফল্যের সকল ক্রেডিট নিজের করে নিতে। সে চেয়েছিলো ম্যাচ জয়ের পর যেন এটা বলা না হয় খেলোয়াড়দের কারনে ম্যাচ জিতেছে। সবখানে যেন লোকে বলে কোচের ট্যাকটিসে ম্যাচ জিতেছে (লোপেতেগুইকে বুঝানো হয়েছে এখানে)। কিন্তু রিয়েল মাদ্রিদে আপনি এটা করতে পারবেন না। এখানে আপনাকে খেলোয়াড়দের ক্রেডিট দিতে হবে। এখানে খেলোয়াড় যতটা না আপনার হাতে আপনি তার চেয়েও বেশি তাদের হাতে। এমনকি বোর্ড ডিরেক্টররাও খেলোয়াড়দের অনেক কাছাকাছি এখানে" 

শুধু যে কোচরাই এখানে এই প্রেশার নিয়ে থাকে সেটাও না। এখানে প্রেসিডেন্টকেও সমপরিমান প্রেশার নিয়ে থাকতে হয়। যেমন বর্তমান প্রেসিডেন্টের আর্চ রাইভাল হয়েও সাবেক প্রেসিদেন্ট রামন কালদরেন বলেছিলো

"পেরেজ অনেক প্রেশারে ছিলো। অনেক সমস্যার মধ্যে ছিল ক্লাব। আমরা সেগুলো নিয়ে কথা বলেছি। পেরেজের পদ হুমকির মধ্যে ছিল। কিন্তু চ্যাম্পিয়নসলীগ তাও টানা তিনবার বাঁচিয়ে দিলো পেরেজকে। এমনকি সে নতুন করে চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্টও হয়ে গেল আবার। রিয়েল মাদ্রিদ এমনই। এখানে আপনার সকল কিছু ভুলে যাওয়া হিবে একমাত্র সফলতা নিয়ে আসতে পারলেই। তাছাড়া পেরেজ মিডিয়াকেও ভাল ব্যবহার করতে পারে। স্পেনের এক সনামধন্য সাংবাদিক পেরেজের হয়ে মিডিয়া দেখে থাকে। "

এই স্ট্যাটমেন্টের পর সেই মিডিয়া পার্সন বলে

"হ্যা আমি পেরেজের এডভাইজার হয়ে আছি। কিন্তু পেরেজকে আমি তেমন কিছুই বলতে পারি নি কি করতে হবে না হবে। আমার থেকে অনেক বেশিই পেরেজ জানে। পেরেজের জন্য রিয়েল মাদ্রিদই সব। আর ২০১২ সালের তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর রিয়েল মাদ্রিদ ছাড়া তার চিন্তা চেতনায় আর কিছুই নেই। গত ৩০ বছরে সে কখনোই রিয়েল মাদ্রিদের একটা ম্যাচও মিস করে নি। আমরা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মত আমেরিকান প্রতিষ্ঠান না আবার সিটি বা পিএসজির কাতারিয়ানদের মতও না। তাদের কাছে ফুটবল ব্যবসা। মাঠে আসলো কি আসলো না কিছুই যায় আসে না। আমাদের কাছে আমাদের ক্লাবই সব। আমরা প্রতিটা ম্যাচে মাঠে থাকে। ক্লাবের হয়ে চিয়ার করি। টিম জিতুক, হারুক বা ড্র করুক ম্যাচ শেষে ড্রেসিং রুমে যাই প্লেয়ারদের অভিনন্দন দেই বা সহস জোগাই। আমরা ক্লাবের প্রতি এতটাই দায়বদ্ধ। "

এতরকম প্রেশার নিয়েও একজন কোচ অন্য সবার থেকে আলাদা। যাকে অন্য সব নামী নামী কোচের ভিড়েও মাদ্রিদ সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়। সে আর কেউ নয় ওয়ান এন্ড অনলি জিনেদিন জিদান। জিদান কেনই বা এরকম স্পেশাল ট্রিটিমেন্ট পায়?  এটা নিয়ে মাদ্রিদের ভিতর একটা রসালো কথা চলে। সেটা হলো

জিদানের সাথে পেরেজের সম্পর্ক জিদানের খেলোয়াড়ি জীবন থেকে। অনেক বলে জিদান ছিল পেরেজের স্পাই। যে কিনা দলের ভিতরের খবর পেরেজকে দিতো। যা পেরেজকে দলের ক্ষমতা হাতে রাখতে সাহায্য করেছে। 

কিন্তু রামন কালদরেন এখানে ব্যতিক্রম সে জিদান নিয়ে বলেছে

আমি আগেই বলেছি রিয়েল মাদ্রিদের প্রয়োজন একজ মনোবিদের। আর আমার দৃষ্টিতে সেরা মনোবিদ ডেল বস্ক এবং জিদান। জিদান নামটা ফুটবলে অনেক বড় নাম হলেও কোচ হয়ে তার প্রথম কাজই ছিল নিজেকে প্বার্শচরিত্র বানানো। সে প্লেয়ারদের বলেছে তারাই হিরো। এটা ছিলো জিদানের একটা আনসেলফিশ কাজ। নিজের প্রাইড ছেড়ে দিয়ে সে প্লেয়ারদের সব প্রাইড দিয়ে দিয়েছে।  প্লেয়ারদের সাথে সে অনেস্টও। এটাই তাকে প্লেয়ারদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। তাই তার প্লেয়াররা মাঠে তার জন্য জীবন  দিতেও প্রস্তুত থাকে। আর এতে করে জিদানও রিয়েলের ট্রফি ক্যাবিনেট ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলেছে"


Post a Comment

0 Comments